গল্প: ইরা গ্যাং
ঘটনাটা নিতান্তই অদ্ভুত বলা যায় । সেদিন দুপুরবেলা রাস্তা দিয়ে হাটার সময় চোখে পরে আমার অবাক করা একটা দৃশ্য। ৪/৫ টা মেয়ে একটা ছেলেকে খুব পেটাচ্ছে । মেয়েদের পড়নে জিন্স শার্ট প্যান্ট। হাতে হকি স্টিক - চোখে কালো গ্লাস। ছেলেটা পিটুনি খেয়ে বলছেন ' আপা আর ভুল করব না এবারের মত ছেড়ে দেন আমায়!!
- - আমি অবাক হয়ে পাশের চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম। দোকানের নাম মন্টু মিয়া চায়ের দোকান। দোকানদার ভাইয়ের চোখ মেয়েদের দিকে। আমি আস্তে করে বললাম' ভাই কাহিনী কি? এই মেয়েরা কারা!! দোকানদার ভাই আমার কথা শুনে বললেন ' চুপ! আস্তে কথা বলেন!! এটা ইরা গ্যাং । সব কয়টা মাস্তান । চাঁদাবাজ ও বলতে পারেন। দোকানদার ভাই কথা শেষ করার সাথে সাথে ইরা গ্যাং এসে হাজির আমাদের সামনে। আমি চুপ করে বসে আছি। দোকানদার ভাই বললেন ' ইরা আপা এই নেন ঠান্ডা মুখ ধুয়ে নেন আপা। তখন একটা মেয়ে সামনে এগিয়ে বোতল হাতে নিয়ে চোখ থেকে গ্লাস খুলল। আমি বুঝতে পারলাম এই মেয়ের নাম ইরা। মাস্তানদের লিডার। তবে মাস্তান হলে কি - এত সুন্দর মায়া মাখা মুখ আমি আগে দেখিনি। আমি হা করে তাকিয়ে আছি। আমার মাঝে ভয় কাজ করছে না। আমার হা দেখে একটা মেয়ে আমার সামনে এসে বলল ' এই মিয়া কার দিকে তাকান - চোখ নামান। আমি মেয়েরটা কথা না শুনে তাকিয়েই আছি। আমার সাহস দেখে দোকানদার ভাইয়ের মাথায় হাত। কয়েকটা মেয়ে রাগ করে আমার সামনে আসলো। হাতে তাদের হকি স্টিক। তখন ইরা ওদের থামিয়ে দিল। ইরা বোতল রেখে - আমার সামনে এসে বলল ' কি সমস্যা? আমি কথা বলতে যাব 'তখনি ইরার একটা ফোন কল আসে আর ইরা ওর বাইক নিয়ে চলে যায়।
- - আমি শান্ত। এই এলাকায় নতুন এসেছি। এখানে আসার কারণ বাবার চাকরি। আমার লেখাপড়া এখনো শেষ হয়নি। আমারা রোড নং৪ বাসা নং AB এর উপর তলা ভাড়া নিয়েছি। বাড়িওয়ালা ভীষণ রাগী মানুষ। কথার মাঝে সব সময় রাগ কাজ করে। উনার দুটা কুকুর ও আছে। পাহারাদার কুকুর। নাম রং, সং। কুকুরের এমন আজব নাম আমি আগে শুনিনি। বাড়িওয়ালা আংকেলের একটা ছেলে আছে নাম আকাশ। আমারা এই বাসায় আসার পর থেকে ওর সাথে আমার এক প্রকার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে বলা যায়। রাতে বসে আছি ছাদে। চিন্তা করছি ইরার কথা। এমন মায়া মাখা মুখ আমি আগে দেখিনি! প্রথম দেখায় আমি ওর প্রেমে পরিনি - আমি ওকে ভালবেসে ফেলছি। জীবনের এতটা সময় পার করলাম - কাউকে ভাল লাগলো না আর শেষমেষ মাস্তান মেয়েকে ভাল লাগলো!! কি কপাল আমার। তবে বাবা মা কি এই মাস্তান মেয়েকে নিজের ছেলের বউ বলে মেনে নিবেন? আমি ইরাকে নিয়ে চিন্তা করছি তখন আকাশ আসলো ছাদে। আকাশের হাতে ঠান্ডা স্প্রাইট। আমার কাছে এসে বলল কি করিস এখানে? স্প্রাইট খাবি? আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম ' ভাই এই ইরা মেয়েটা কেমন রে?
আকাশ আমার দিকে তাকিয়ে বলল ' ভাল তবে নামকরা মাস্তান - খুব ভয়ংকর। এলাকার সব ছেলের পা হাত একবার হলেও ভেঙেছে এই মেয়েটা।
আমি : তোর পা হাত ও কি ভাঙছে?
আকাশ : আমার না। আমি তো ভাল ছেলে - আপুকে দেখলে ১০০ হাত দূরে থাকি। আচ্ছা তুই এই ইরার কথা কেন জিজ্ঞেস করছিস হঠাৎ করে?আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম' ভাই সত্যি বলতে আমি প্রথম দেখাতে ' ইরার প্রেমে পড়ে গেছি।
- - আমার কথা শুনে আকাশ স্প্রাইট গলায় আটকে গেল। কাশতে কাশতে বলল ' মাথা খারাপ তোর। পা আগে ভাঙবে তারপর হাত। আমি বললাম ' ভাই সব ভেঙে ফেলুক সমস্যা নাই। চলনা, একটু ইরার বাসার নিচে থেকে ঘুরে আসি। আমার কথা শুনে আকাশ ছাদ থেকে লাফ দিতে যাচ্ছে - আমি ওকে আটকালাম। আকাশ আমার দিকে তাকিয়ে বলল ভাই আমি ঘুমাবো" যাই!! আমি আকাশের কথা না শুনে জোর করে ধরে নিয়ে গেলাম ইরার বাসার নিচে।
রাত ১২ টা। আকাশের পা কাঁপছে ভয়ে। আমি তাকিয়ে আছি বারান্দার দিকে। আশেপাশে কেউ নেই। কয়েকটা কুকুর দূর থেকে চেঁচামেচি করছে। আমি শিস বাজাচ্ছি। বেশ কয়েকবার বাজিয়েছি কিন্তু কোন সাড়া নেই। আমি আবার ও শিস বাজাচ্ছি উপরের বারান্দার দিকে তাকিয়ে। তখন আমার কাঁধে কে বার বার আস্তে করে ধাক্কা দিচ্ছে। আমি মনে করলাম আকাশ ভয়ে এইসব করছে - তখন আকাশের উপর রাগ করে পিছনে তাকিয়ে দেখি আকাশ নেই। আমার সামনে ইরা। হাতে আবার হকি স্টিক ও আছে। আমি আমার পায়ের দিকে তাকালাম' মানে ভেঙে গেছে কি না সেটা দেখতে। আমার হা করা দেখে ইরা বলল ' নাম কি? আমি বললাম' আমি শান্ত এই এলাকায় নতুন।। ইরা: হ্যা নতুন সেটা বুঝতে পারছি কিন্তু সমস্যা কি??
- - আমি দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বললাম ' না মানে চাঁদ দেখি। ইরা রাগ করে হকি স্টিক এক হাত থেকে অন্য হাতে নিয়ে বলল ' চাঁদ দেখে শিস বাজাতে হয়?? আর আমার বারান্দায় চাঁদ আছে নাকি? আমি বুঝতে পারলাম আমি ফেঁসে গেছি। বিপদকাল মাথায় কোন বুদ্ধি আসছে না! চিন্তা করে করে মাথায় হাতিয়ে বললাম ' আপনার পিছনে ঐটা কি? ইরা পিছনে ঘুরে তাকাতেই আমি পগাড় পার। এক দৌড়ে বাসায়। আল্লাহ বেঁচে গেছি।
- - পরের দিন আর আকাশের দেখা পেলাম না। দুপুরবেলা রাস্তা দিয়ে হাটছি তখন চিন্তা করছি খুব একটা বেঁচে গেছি কালকে রাতে। কিন্তু না এই ভাবে ভয় পেলে চলবে না। ভয়কে জয় কারাই শান্তর কাজ
😎। তারপর থেকে প্রায় রাতে আমি ইরার বারান্দার নিচে গিয়ে শিস বাজাতাম আর ইরা বারান্দায় বা নিচে আসার আগেই - পগাড় পার হতাম। এই ভাবে মাস্তান মেয়েকে আমি উত্যক্ত করতে থাকলাম। মেয়েটা আমার এই ইভটিজিং সহ্য করতে না পেরে সে দিন রাগেফুলে আমার খোঁজ করেছে মন্টু ভাইয়ের কাছে।
- - সে দিন দুপুরবেলা যখন মন্টু ভাইয়ের দোকানে যাই তখন মন্টু ভাই - আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন! আমি দুবার চা দেওয়ার কথা বললাম ' কিন্তু চা পেলাম না। আমি বললাম ' কি ভাই চা দিবেন না? মন্টু ভাই তখন আমার দিকে তাকিয়ে বললেন' না চা দেওয়া যাবে না। ইরা আপা না করছে আপনার কাছে চা বিক্রি করতে। আমি মন্টু ভাইয়ের কথা শুনে অবাক!!
- - এই এলাকায় এইটাই ভালো চায়ের দোকান আছে - কিন্ত এখানেও চা পেলাম না!! আমি চা না পেয়ে সিগারেট খেয়ে বাসায় ফিরলাম। রাস্তার পাশে বাড়িওয়ালা আংকেল দাঁড়িয়ে আছেন। সাথে উনার পাহারাদার কুকুর। রং, সং!! কুকুর দুটি আমার দিকে তাকিয়ে হা করে আছে। আমি বুঝতে পারলাম - আমায় কামড়ানোর ইচ্ছা জেগেছে ওদের মনে। বাসায় এসে বসে আছি রুমে। পাশের রুমে মা গল্প করছেন পাশের বাসার আন্টির সাথে 'আর আমি চিন্তা করছি ইরার কথা। তখন পকেট থেকে ফোন বার করে ইরাকে মেসেজ করলাম। নাম্বার জোগাড় করেছি ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে।
- - এই ভাবে আমি ইরার পিছনে পরে থাকি। মেসেজ করি - বারান্দার নিচে গিয়ে শিস বাজাই - রাস্তায় পিছনে পিছনে ফলো করি। আমি বুঝতে পারলাম ' ইরা আমার পাগলামি দেখে আমার প্রতি আস্তে আস্তে দুর্বল হচ্ছে। মানে আমার প্রেমে পরছে আস্তে আস্তে করে 'সেটা বলা যায়। ইরা এখন মন্টু ভাইকে বলে দিছে আমার কাছে চা বিক্রি করতে। সে দিন - মন্টু ভাইকে আমি সিগারেট দেওয়া কথা বলায় মন্টু ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ' সিগারেট খেলে শরীর খারাপ করবে। নেন চা খান। আমি হা করে তাকিয়ে আছি মন্টু ভাইয়ের কথা শুনে!! মন্টু ভাই আমার দিকে তাকিয়ে তখন বললেন' হা করার কিছু নেই এই সব ইরা আপার কথা। ইরা আপা বলছেন ' আপনার কাছে সিগারেট বিক্রি না করতে।
- - মন্টু ভাইয়ের কথা শুনে আমি মহা খুশি। আমি বুঝতে পারলাম মেয়েটা মাস্তান হলে কি হবে - আমার খেয়াল রাখে দেখছি। এই ভাবে দিন কাটতে লাগল। দুদিন পর এক রাতে আমি খাবার খেয়ে ইরার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি। রাত ১২ টা। শিস বাজাচ্ছি বারান্দার দিকে তাকিয়ে কিন্তু আজ আর ইরার কোন সাড়া পাচ্ছি না!! আমি মনে করলাম ইরা হয়তো ঘুমিয়ে গেছে। আমার মন খারাপ হয়ে গেল - আজ আর ইরাকে দেখতে পারলাম না!! আমি মন খারাপ করে যেমনি পিছনে ঘুরলাম তখনি দেখি ইরা আমার সামনে। আমার চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে ইরা গ্যাং এর সব মেয়েরা। সাবার হাতে হকি স্টিক। ইরা আমার কলারে ধরে বলল ' সমস্যা কি? আমি ওর মায়া মাখা চোখে তাকিয়ে বললাম' চাঁদ দেখি। ইরা তখন হাতে হকি স্টিক নিয়ে বলল ' সত্যি কথা বলেন এখানে কি? আমার বারান্দার দিকে তাকিয়ে শিস বাজান কেন? আমাকে দেখার জন্য?
- - আমি ইরার রাগ মাখা চোখের ভেতরে দেখতে পাচ্ছি মিষ্টি ইরাকে। আমি বুঝতে পারলাম ইরা আমার মুখ থেকে ভালবাসি তোমায় 'এই কথা শুনতে চায়।।
- - আমি ইরার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম ' ইরা আমি আমি। ইরা বলল ' হ্যা বলেন। আমি বললাম ' ইরা আমি আমি আমি। ইরা বলল ' প্লিজ বলেন। আমি বললাম ' ইরা আমি আমি তোমার মতন পেত্নীকে দেখার জন্য এখানে আসি না। আয়নাতে নিজের মুখ দেখছ? পেত্নী একটা
😂।
ইরা : What !! আমি বললাম ' সরো।
- - এই বলে ইরাকে সরিয়ে চলে যাচ্ছি। ইরা রাগে ফুলছে ওর চোখে জল এসে গেছে। আমি হেটে হেটে যাচ্ছি আর চিন্তা করছি ওকে একটু কাঁদাবো রাগাবো তারপর না হয় ভালবাসি বলল।
( চলবে) - - - - -
- - আমি অবাক হয়ে পাশের চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম। দোকানের নাম মন্টু মিয়া চায়ের দোকান। দোকানদার ভাইয়ের চোখ মেয়েদের দিকে। আমি আস্তে করে বললাম' ভাই কাহিনী কি? এই মেয়েরা কারা!! দোকানদার ভাই আমার কথা শুনে বললেন ' চুপ! আস্তে কথা বলেন!! এটা ইরা গ্যাং । সব কয়টা মাস্তান । চাঁদাবাজ ও বলতে পারেন। দোকানদার ভাই কথা শেষ করার সাথে সাথে ইরা গ্যাং এসে হাজির আমাদের সামনে। আমি চুপ করে বসে আছি। দোকানদার ভাই বললেন ' ইরা আপা এই নেন ঠান্ডা মুখ ধুয়ে নেন আপা। তখন একটা মেয়ে সামনে এগিয়ে বোতল হাতে নিয়ে চোখ থেকে গ্লাস খুলল। আমি বুঝতে পারলাম এই মেয়ের নাম ইরা। মাস্তানদের লিডার। তবে মাস্তান হলে কি - এত সুন্দর মায়া মাখা মুখ আমি আগে দেখিনি। আমি হা করে তাকিয়ে আছি। আমার মাঝে ভয় কাজ করছে না। আমার হা দেখে একটা মেয়ে আমার সামনে এসে বলল ' এই মিয়া কার দিকে তাকান - চোখ নামান। আমি মেয়েরটা কথা না শুনে তাকিয়েই আছি। আমার সাহস দেখে দোকানদার ভাইয়ের মাথায় হাত। কয়েকটা মেয়ে রাগ করে আমার সামনে আসলো। হাতে তাদের হকি স্টিক। তখন ইরা ওদের থামিয়ে দিল। ইরা বোতল রেখে - আমার সামনে এসে বলল ' কি সমস্যা? আমি কথা বলতে যাব 'তখনি ইরার একটা ফোন কল আসে আর ইরা ওর বাইক নিয়ে চলে যায়।
- - আমি শান্ত। এই এলাকায় নতুন এসেছি। এখানে আসার কারণ বাবার চাকরি। আমার লেখাপড়া এখনো শেষ হয়নি। আমারা রোড নং৪ বাসা নং AB এর উপর তলা ভাড়া নিয়েছি। বাড়িওয়ালা ভীষণ রাগী মানুষ। কথার মাঝে সব সময় রাগ কাজ করে। উনার দুটা কুকুর ও আছে। পাহারাদার কুকুর। নাম রং, সং। কুকুরের এমন আজব নাম আমি আগে শুনিনি। বাড়িওয়ালা আংকেলের একটা ছেলে আছে নাম আকাশ। আমারা এই বাসায় আসার পর থেকে ওর সাথে আমার এক প্রকার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে বলা যায়। রাতে বসে আছি ছাদে। চিন্তা করছি ইরার কথা। এমন মায়া মাখা মুখ আমি আগে দেখিনি! প্রথম দেখায় আমি ওর প্রেমে পরিনি - আমি ওকে ভালবেসে ফেলছি। জীবনের এতটা সময় পার করলাম - কাউকে ভাল লাগলো না আর শেষমেষ মাস্তান মেয়েকে ভাল লাগলো!! কি কপাল আমার। তবে বাবা মা কি এই মাস্তান মেয়েকে নিজের ছেলের বউ বলে মেনে নিবেন? আমি ইরাকে নিয়ে চিন্তা করছি তখন আকাশ আসলো ছাদে। আকাশের হাতে ঠান্ডা স্প্রাইট। আমার কাছে এসে বলল কি করিস এখানে? স্প্রাইট খাবি? আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম ' ভাই এই ইরা মেয়েটা কেমন রে?
আকাশ আমার দিকে তাকিয়ে বলল ' ভাল তবে নামকরা মাস্তান - খুব ভয়ংকর। এলাকার সব ছেলের পা হাত একবার হলেও ভেঙেছে এই মেয়েটা।
আমি : তোর পা হাত ও কি ভাঙছে?
আকাশ : আমার না। আমি তো ভাল ছেলে - আপুকে দেখলে ১০০ হাত দূরে থাকি। আচ্ছা তুই এই ইরার কথা কেন জিজ্ঞেস করছিস হঠাৎ করে?আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম' ভাই সত্যি বলতে আমি প্রথম দেখাতে ' ইরার প্রেমে পড়ে গেছি।
- - আমার কথা শুনে আকাশ স্প্রাইট গলায় আটকে গেল। কাশতে কাশতে বলল ' মাথা খারাপ তোর। পা আগে ভাঙবে তারপর হাত। আমি বললাম ' ভাই সব ভেঙে ফেলুক সমস্যা নাই। চলনা, একটু ইরার বাসার নিচে থেকে ঘুরে আসি। আমার কথা শুনে আকাশ ছাদ থেকে লাফ দিতে যাচ্ছে - আমি ওকে আটকালাম। আকাশ আমার দিকে তাকিয়ে বলল ভাই আমি ঘুমাবো" যাই!! আমি আকাশের কথা না শুনে জোর করে ধরে নিয়ে গেলাম ইরার বাসার নিচে।
রাত ১২ টা। আকাশের পা কাঁপছে ভয়ে। আমি তাকিয়ে আছি বারান্দার দিকে। আশেপাশে কেউ নেই। কয়েকটা কুকুর দূর থেকে চেঁচামেচি করছে। আমি শিস বাজাচ্ছি। বেশ কয়েকবার বাজিয়েছি কিন্তু কোন সাড়া নেই। আমি আবার ও শিস বাজাচ্ছি উপরের বারান্দার দিকে তাকিয়ে। তখন আমার কাঁধে কে বার বার আস্তে করে ধাক্কা দিচ্ছে। আমি মনে করলাম আকাশ ভয়ে এইসব করছে - তখন আকাশের উপর রাগ করে পিছনে তাকিয়ে দেখি আকাশ নেই। আমার সামনে ইরা। হাতে আবার হকি স্টিক ও আছে। আমি আমার পায়ের দিকে তাকালাম' মানে ভেঙে গেছে কি না সেটা দেখতে। আমার হা করা দেখে ইরা বলল ' নাম কি? আমি বললাম' আমি শান্ত এই এলাকায় নতুন।। ইরা: হ্যা নতুন সেটা বুঝতে পারছি কিন্তু সমস্যা কি??
- - আমি দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বললাম ' না মানে চাঁদ দেখি। ইরা রাগ করে হকি স্টিক এক হাত থেকে অন্য হাতে নিয়ে বলল ' চাঁদ দেখে শিস বাজাতে হয়?? আর আমার বারান্দায় চাঁদ আছে নাকি? আমি বুঝতে পারলাম আমি ফেঁসে গেছি। বিপদকাল মাথায় কোন বুদ্ধি আসছে না! চিন্তা করে করে মাথায় হাতিয়ে বললাম ' আপনার পিছনে ঐটা কি? ইরা পিছনে ঘুরে তাকাতেই আমি পগাড় পার। এক দৌড়ে বাসায়। আল্লাহ বেঁচে গেছি।
- - পরের দিন আর আকাশের দেখা পেলাম না। দুপুরবেলা রাস্তা দিয়ে হাটছি তখন চিন্তা করছি খুব একটা বেঁচে গেছি কালকে রাতে। কিন্তু না এই ভাবে ভয় পেলে চলবে না। ভয়কে জয় কারাই শান্তর কাজ
- - সে দিন দুপুরবেলা যখন মন্টু ভাইয়ের দোকানে যাই তখন মন্টু ভাই - আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন! আমি দুবার চা দেওয়ার কথা বললাম ' কিন্তু চা পেলাম না। আমি বললাম ' কি ভাই চা দিবেন না? মন্টু ভাই তখন আমার দিকে তাকিয়ে বললেন' না চা দেওয়া যাবে না। ইরা আপা না করছে আপনার কাছে চা বিক্রি করতে। আমি মন্টু ভাইয়ের কথা শুনে অবাক!!
- - এই এলাকায় এইটাই ভালো চায়ের দোকান আছে - কিন্ত এখানেও চা পেলাম না!! আমি চা না পেয়ে সিগারেট খেয়ে বাসায় ফিরলাম। রাস্তার পাশে বাড়িওয়ালা আংকেল দাঁড়িয়ে আছেন। সাথে উনার পাহারাদার কুকুর। রং, সং!! কুকুর দুটি আমার দিকে তাকিয়ে হা করে আছে। আমি বুঝতে পারলাম - আমায় কামড়ানোর ইচ্ছা জেগেছে ওদের মনে। বাসায় এসে বসে আছি রুমে। পাশের রুমে মা গল্প করছেন পাশের বাসার আন্টির সাথে 'আর আমি চিন্তা করছি ইরার কথা। তখন পকেট থেকে ফোন বার করে ইরাকে মেসেজ করলাম। নাম্বার জোগাড় করেছি ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে।
- - এই ভাবে আমি ইরার পিছনে পরে থাকি। মেসেজ করি - বারান্দার নিচে গিয়ে শিস বাজাই - রাস্তায় পিছনে পিছনে ফলো করি। আমি বুঝতে পারলাম ' ইরা আমার পাগলামি দেখে আমার প্রতি আস্তে আস্তে দুর্বল হচ্ছে। মানে আমার প্রেমে পরছে আস্তে আস্তে করে 'সেটা বলা যায়। ইরা এখন মন্টু ভাইকে বলে দিছে আমার কাছে চা বিক্রি করতে। সে দিন - মন্টু ভাইকে আমি সিগারেট দেওয়া কথা বলায় মন্টু ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ' সিগারেট খেলে শরীর খারাপ করবে। নেন চা খান। আমি হা করে তাকিয়ে আছি মন্টু ভাইয়ের কথা শুনে!! মন্টু ভাই আমার দিকে তাকিয়ে তখন বললেন' হা করার কিছু নেই এই সব ইরা আপার কথা। ইরা আপা বলছেন ' আপনার কাছে সিগারেট বিক্রি না করতে।
- - মন্টু ভাইয়ের কথা শুনে আমি মহা খুশি। আমি বুঝতে পারলাম মেয়েটা মাস্তান হলে কি হবে - আমার খেয়াল রাখে দেখছি। এই ভাবে দিন কাটতে লাগল। দুদিন পর এক রাতে আমি খাবার খেয়ে ইরার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি। রাত ১২ টা। শিস বাজাচ্ছি বারান্দার দিকে তাকিয়ে কিন্তু আজ আর ইরার কোন সাড়া পাচ্ছি না!! আমি মনে করলাম ইরা হয়তো ঘুমিয়ে গেছে। আমার মন খারাপ হয়ে গেল - আজ আর ইরাকে দেখতে পারলাম না!! আমি মন খারাপ করে যেমনি পিছনে ঘুরলাম তখনি দেখি ইরা আমার সামনে। আমার চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে ইরা গ্যাং এর সব মেয়েরা। সাবার হাতে হকি স্টিক। ইরা আমার কলারে ধরে বলল ' সমস্যা কি? আমি ওর মায়া মাখা চোখে তাকিয়ে বললাম' চাঁদ দেখি। ইরা তখন হাতে হকি স্টিক নিয়ে বলল ' সত্যি কথা বলেন এখানে কি? আমার বারান্দার দিকে তাকিয়ে শিস বাজান কেন? আমাকে দেখার জন্য?
- - আমি ইরার রাগ মাখা চোখের ভেতরে দেখতে পাচ্ছি মিষ্টি ইরাকে। আমি বুঝতে পারলাম ইরা আমার মুখ থেকে ভালবাসি তোমায় 'এই কথা শুনতে চায়।।
- - আমি ইরার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম ' ইরা আমি আমি। ইরা বলল ' হ্যা বলেন। আমি বললাম ' ইরা আমি আমি আমি। ইরা বলল ' প্লিজ বলেন। আমি বললাম ' ইরা আমি আমি তোমার মতন পেত্নীকে দেখার জন্য এখানে আসি না। আয়নাতে নিজের মুখ দেখছ? পেত্নী একটা
ইরা : What !! আমি বললাম ' সরো।
- - এই বলে ইরাকে সরিয়ে চলে যাচ্ছি। ইরা রাগে ফুলছে ওর চোখে জল এসে গেছে। আমি হেটে হেটে যাচ্ছি আর চিন্তা করছি ওকে একটু কাঁদাবো রাগাবো তারপর না হয় ভালবাসি বলল।
( চলবে) - - - - -
লেখক : তানভীর রায়হান।
গল্প: ইরা গ্যাং
গল্প: ইরা গ্যাং

Comments
Post a Comment