গল্প : ইরা গ্যাং - পর্ব ২
এলাকার নামকরা মাস্তান মেয়ে ইরা। সে দিন রাতে যখন ইরা আমার কলারে ধরে বলেছিল 'প্রতিদিন রাতে আমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে বারান্দার দিকে তাকিয়ে কি দেখন?? আমি তখন বলেছিলাম তোমার মতন পেত্নীকে দেখার জন্য তোমার বাসার নিচে আসি না। ইরা আমায় ভালবাসে মনে মনে' তাই আমার এই কথা শুনে রাগে ফুলতে থাকে আর ওর চোখে জল চলে আসে। আমি এইসব কান্না পাত্তা না দিয়ে বাসায় এসে চিৎপটাং হয়ে ঘুম দিলাম।
- - পরের দিন দুপুরবেলা আমার আকাশের সাথে দেখা। আকাশ আমাদের বাড়িওয়ালা আংকেলের ছেলে। আমার কাছের বন্ধু বলতে পারেন। আকাশ আমায় দেখে এগিয়ে এসে বলল কোথায় যাস? আমি বললাম ' চা খাব। আমি আর আকাশ রাস্তা দিয়ে হাটছি। যাচ্ছি মন্টু ভাইয়ের চায়ের দোকানে তখন দেখি ইরা আর কয়েকটা মেয়ে একটা ছেলেকে খুব পেটাচ্ছে।ছেলেটা- - ইরা আমার কথা শুনে রাগে ফুলছে। আমার কথা শুনে ইরা গ্রুপের সব মেয়ে হা করে আছে!! যে ইরার চোখের দিকে তাকিয়ে এলাকার কোন ছেলে কথা বলতে পারে না " সেই ইরাকে আমি এইসব বলছি!! ইরা চুপ করে আছে। আমি ইরার চুলে হাত দিয়ে বললাম ' এইটা চুলে না অন্য কিছু?? কালকে থেকে এইসব মাস্তানি করতে দেখলে তোমার হকি স্টিক দিয়ে তোমার পা ভাঙব আগে। বেয়াদব মেয়ে!! ইরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে - অনেক রাগ হচ্ছে ওর কিন্তু আমায় কিছু বলতে পারছে না। আমি বুঝতে পারলাম মেয়েটা আমায় সত্যি অনেক ভালবাসে। আমি ইরার মায়া মাখা চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম ' এইসব কি কাপড় পরছো? বাসায় শাড়ি নেই পেত্নী
- - ইরা ওর বন্ধুদের সাথে চলে গেল। আমি বসে আছি পাশের মন্টু ভাইয়ের চায়ের দোকানে। আকাশ আর মন্টু ভাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। মন্টু ভাই আমার হাতে বেশি করে দুধ মাখা চা দিয়ে বললেন ' ভাইজান আপনি জাদু জানেন!! ইরা আপাকে এই ভাবে বকা দিলেন আর আপা আপনাকে কিছুই বলল না!! আমি মন্টু ভাইয়ের কথা শুনে চুপ করে আছি আর চা খাচ্ছি।
- - রাতে বসে আছি ছাদে। আকাশে সুন্দর চাঁদ উঠেছে। চিন্তা করছি ইরার কথা। মেয়েটাকে অনেক বকা দেই কিন্তু মেয়েটা নীরবে আমার সব বকা সহ্য করে! কিন্তু না এত তাড়াতাড়ি ভালবাসি বলব না। আগে আরো একটু কাঁদাবো ' ওর কান্না মাখা চোখ মুখ দেখবো তারপর না হয় ভালবাসি বলব। পকেট থেকে ফোন বার করে ইরাকে কল দেওয়া সাথে সাথে ফোন কল রিসিভ হল। আমি জিজ্ঞেস করলাম ' খাওয়াদাওয়া হইছে কি না? ইরা লক্ষী মেয়ের মতন উত্তর দিল। ইরা আমার কাছ থেকে ভালবাসি তোমায় 'এই কথা শুন চায় কিন্তু আমি কোন উত্তর দিলাম না। আমি চিন্তা করলাম আগে মেয়েটাকে মানুষ করতে হবে তারপর ভালবাসা বাসি হবে।।
তারপর থেকে আমি ইরার উপর একটু বেশি রাগারাগি করতাম। আমার লেখাপড়া ও শেষ হয়ে গেল। ইরা এখন আর মারামারি করে না আমার ভয়ে। কারণ এলাকার কোথাও মারামারি করলে - কেউ না কেউ আমায় ফোন দিয়ে সব বলে দেয় আর তারপর আমি বকা শুরু করি। তবে একদিন তো ওকে কানে ধরিয়ে রেখে দিয়েছিলাম!! করণ কি সেটা বলি।
- - এই মেয়টা এত পাজি যে এলাকায় নতুন কেউ আসলে তাকে ভাল করে রেগিং করে। একদিন সন্ধ্যায় ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেছে। বাসায় অনেক গরম লাগছে। ইরাকে দুবার কল দিলাম কিন্তু রিসিভ করল না! তাই আমি বাসা থেকে বের হয়ে হাটছি। চিন্তা করলাম মন্টু ভাইয়ের দোকানে গিয়ে চা খেয়ে তারপর ইরার বাসার নিচে গিয়ে কল দিব ওকে । আমি হাটছি আর হাটছি। ইলেক্ট্রিসিটি নেই। আশপাশ মোটামুটি অন্ধকার বলা যায়। আমি মন্টু ভাইয়ের দোকানের পাশে এসে দেখি ২টা ছেলে কান ধরে উঠবস করছে!! আমি বুঝতে পারলাম এইটা ইরার কাজ। আমি আড়াল থেকে দেখি ইরা চেয়ারে বসে সিগারেট খাচ্ছে আর ওর কাঁধে টিপে দিচ্ছে অন্য মেয়েরা। মন্টু ভাই গুনছে ছেলেদের কানে ধরে উটবস। তখন একটা মেয়ে ইরাকে বলল ' দোস্ত শান্ত ভাই জানলে তোকে কিন্তু অনেক বকা দিবে। ইরা মেয়েটার কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে বলল' কে শান্ত!! আমি শান্তের বস
- - দু দিন পর এক বিকালে ইরা বাসার ছাদে বসে সিগারেট খাচ্ছিল বন্ধুদের সাথে তখন আমি গিয়ে দেখলাম এই অবস্থা!! ইরা আমায় হঠাৎ করে দেখে চমকে গেল। আমি দেখি ওর হাতে সিগারেট। আমার অনেক রাগ হলো। আমি ওর মেয়ে বন্ধুদের চলে যেতে বললাম ' ওরা সবাই চলে গেল। আমি ইরার হাত থেকে সিগারেট নিয়ে ফেলে দিলাম। আর কিচ্ছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। আজ আর ইরাকে বকা দিতে পারলাম না কারণ আমি আজকেই জানাতে পারলাম ইরার মা নেই। ইরা যখন ক্লাস ওয়ানে পড়ে তখন ওর মা মারা যান!! ছোটবেলা থেকে বাবার কাছে মেয়েটা বড় হয়েছে - বাবা অনেক ভালবাসেন ওকে। তাই বেশি আদরে আজ এই অবস্থা। আমি চুপ করে আছি দেখে' ইরা কান ধরে বলল আর খাব না। আমি ইরার কথা শুনে আর কিচ্ছু বললাম না। সোজা বাসায় চলে আসলাম।
- - রাতে ছাদে বসে বসে চিন্তা করলাম মেয়েটার ভালবাসা দরকার। আমি আর ওকে কষ্ট দিব না। অনেক কাঁদিয়েছি। না আর কাঁদাতে পারব না।
- - পরের দিন সকালে টেবিলে বসে নাস্তা করছি তখন বাবা এসে আমায় বললেন ' রেডি হয়ে এই ঠিকানায় চলে যাও। তোমার জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করেছি। লেখাপড়া শেষ হয়েছে তোমার - এখন আর বসে থাকলে হবে না। আমি বাবার কথা শুনে নাস্তা করে করে বললাম 'জ্বি আব্বা।।
বাবা আমার হাতে কাড দিয়ে চলে গেলেন। আমি রেডি সেডি হয়ে - বের হলাম বাসা থেকে। তখনি দেখি আমার সামনে বাড়িওয়ালার পাহারাদার কুকুর - রং,সং দাঁড়িয়ে আছে!! কুকুর দুটা হা করে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে পারলাম আমায় কামড়ানোর ইচ্ছা জেগেছে ওদের মনে। কিন্তু বাবু তোমাদের এই ইচ্ছাপূরণ হবে না!! তোমাদের বোকা বানিয়ে আমি পালাব। আমি রাস্তার পাশে পরে থাকা পাথর হাতে নিয়ে কুকুরের দিকে তাকিয়ে বললাম' রং সং বাবু মাংসটা কুড়িয়ে আনো। এই বলে পাথর ছুড়ে দিলাম দূরে। কিন্তু কুকুর পাথর কুড়াতে না গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে!! আমি বুঝতে পারলাম উনারা মাংস কোনটা আর পাথর কোনটা ভল জানেন!!
- - তারপর কোন উপায় না পেয়ে দিলাম দৌড়। কুকুর আমি এত ভয় পাই আর সেই কুকুর আমায় এই ভাবে দৌড়ায়। কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। কুকুরের দৌড়ানি খেয়ে হাতের ফাইল সব নিয়ে ইরার বাসার সামনে এসে পরে গেলাম ইরার বাসার সামনের খোলা ম্যানহোল। আহ কি সুগন্ধ ! আহ আহ। আমার পুরোটা শরীর শেষ। মেন হলের পচা নোংরা সব কিছু আমার গায়ে। কুকুর এখনো ম্যানহোলের উপর থেকে চেঁচাচ্ছে!! আমি বললাম ' ভাই অনেক হইছে এখন চলে যা!! বিকালবেলা প্রমিস তদের চাইনিজে নিয়ে যাব কুকুর ভাই
😭। তখন ইরা এসে কুকুর কয়টাকে তাড়িয়ে দিয়ে আমায় ম্যানহোল থেকে টেনে তুলল। আমার পুরো শরীর কালো হয়ে আছে শুধু দাঁত সাদা!! আমি ইরার দিয়ে তাকিয়ে বললাম - না মানে কুকুর আমায় অনেক ভয় পায় তো? তাই মানে ইয়ে!!
- - ইরা আমার কথা শুনে হাসতে হাসতে মারা যাচ্ছে। ইরা হেসে হেসে বলল ' ও কুকুর আপনাকে ভয় পায়!! তাই আপনি ম্যানহোলে
😂 বাহ কি যুক্তি!! এই বলে ইরা হাসতে থাকে। আমি কি বলব চিন্তা করে করে মাথায় হাতাচ্ছি। আমি ইরার হাসি দেখে তাকিয়ে আছি ওর মুখের দিকে। আহ কত মায়া মাখা হাসি। এই মেয়েকে কতো বকা দিয়েছি! ইরা যখন হাসছে তখন আমি ইরার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম ' ইরা আমি তোমায় ভালবাসি। আমার কথা শুনে ইরার হাসি বন্ধ হয়ে গেল। আমি নোংরা মাখা জামা কাপড় নিয়ে রাস্তার পাশে থেকে একটা ঘাসফুল নিয়ে এসে ইরার সামনে বসে বললাম' সত্যি অনেক ভালবাসি।। তখন ইরার মুখে ছিল প্রশান্তির মৃদ হাসি।
বাবা আমার হাতে কাড দিয়ে চলে গেলেন। আমি রেডি সেডি হয়ে - বের হলাম বাসা থেকে। তখনি দেখি আমার সামনে বাড়িওয়ালার পাহারাদার কুকুর - রং,সং দাঁড়িয়ে আছে!! কুকুর দুটা হা করে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে পারলাম আমায় কামড়ানোর ইচ্ছা জেগেছে ওদের মনে। কিন্তু বাবু তোমাদের এই ইচ্ছাপূরণ হবে না!! তোমাদের বোকা বানিয়ে আমি পালাব। আমি রাস্তার পাশে পরে থাকা পাথর হাতে নিয়ে কুকুরের দিকে তাকিয়ে বললাম' রং সং বাবু মাংসটা কুড়িয়ে আনো। এই বলে পাথর ছুড়ে দিলাম দূরে। কিন্তু কুকুর পাথর কুড়াতে না গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে!! আমি বুঝতে পারলাম উনারা মাংস কোনটা আর পাথর কোনটা ভল জানেন!!
- - তারপর কোন উপায় না পেয়ে দিলাম দৌড়। কুকুর আমি এত ভয় পাই আর সেই কুকুর আমায় এই ভাবে দৌড়ায়। কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। কুকুরের দৌড়ানি খেয়ে হাতের ফাইল সব নিয়ে ইরার বাসার সামনে এসে পরে গেলাম ইরার বাসার সামনের খোলা ম্যানহোল। আহ কি সুগন্ধ ! আহ আহ। আমার পুরোটা শরীর শেষ। মেন হলের পচা নোংরা সব কিছু আমার গায়ে। কুকুর এখনো ম্যানহোলের উপর থেকে চেঁচাচ্ছে!! আমি বললাম ' ভাই অনেক হইছে এখন চলে যা!! বিকালবেলা প্রমিস তদের চাইনিজে নিয়ে যাব কুকুর ভাই
- - ইরা আমার কথা শুনে হাসতে হাসতে মারা যাচ্ছে। ইরা হেসে হেসে বলল ' ও কুকুর আপনাকে ভয় পায়!! তাই আপনি ম্যানহোলে
লেখক : তানভীর রায়হান।
গল্প : ইরা গ্যাং - পর্ব ২
* গল্পটা এখানেই শেষ *
গল্প : ইরা গ্যাং - পর্ব ২
* গল্পটা এখানেই শেষ *

Comments
Post a Comment